সময়ের প্রলেপে

ভাঙ্গা মন (নভেম্বর ২০১৯)

তৈয়বা মনির
  • ৪৩
যদি হঠাৎ শুনতে পাও ! আমি নেই, কোথাও নেই ! জানি,কারো জন্যে কোনোকিছু থেমে থাকে না l সময় ঠিকই শূন্যস্থান পূরণ করে দেয় l সময়ের প্রলেপে আমি হয়তো ধুসর স্মৃতি হয়ে যাবো ; যেমনটি আমার পূর্বসুরীরা l কি ভাবছো ? চিরকাল আমাকে ভালোবেসে যাবে ! আমার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রাখবে ! শোনো, স্মৃতি শুধুই স্মৃতি l বাস্তবতা ও সময় তোমাকে একাকী বাঁচতে শিখিয়ে দিবে l কিংবা স্মৃতি গুলোকে ধূসর করে দিয়ে নতুন করে চলার সাথী যুগিয়ে দিবে l
কাল কি হয়েছিল জানো ? দেখি, মা আমার জন্যে খাবারের ঢালি সাজিয়ে বসে আছে l নিজের হাতে যত্ন করে রান্না করেছে, আমার সব পছন্দের খাবার l আমার সেই চিরচেনা দখিন বারান্দায় l আমায় দেখে মা ভুবন ভুলানো হাসি হাসলেন ! মনে হলো সৃষ্টির সব ভালোবাসা যেন তার হাসিতে ঝরে পড়ছে ! আমি অবাক হয়ে বললাম, এতো খাবার আমার জন্যে !
ভাবছো, কেন অবাক হলাম ?
আমার মা রাঁধতে জানে না l কোনোদিন সে রান্না করেনি l তাই কখনো মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হয়নি আমাদের l অথচ আজ মা নিজের হাতে আমার সব পছন্দের খাবার রান্না করে; সেই খাবার সুন্দরভাবে সাজিয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে ! অবাক হবার বিষয় নয় কি !
আমার দুচোখ বেয়ে নোনাজল ঝরতে শুরু করলো l মা আমার মাথায় হাত রাখলেন l বললেন, মাকে খুব মনে পড়ে তোর ? আমি শুধু তাকিয়ে আছি মায়ের মুখের পানে l কতদিন এই মুখটা দেখি না !
মা বললেন, দখিনে চেয়ে দেখ, সেই খোলা মাঠটা আগের মতোই আছে l হিজল ফুলগুলো এখনও ঝরে পড়ে গাছ তলায় l ফুলে ফুলে মনে হয় যেন গোলাপি মখমলের বিছানা l তোর মনে পড়ে ? হিজল ফুলের গহনা তুই মাথায়, গলায়, কানে, হাতে ও পায়ে জড়িয়ে ঘুরে বেড়াতি l ওই যে পশ্চিমের ডোবাটা ! এতে মাছ কিলবিল করতো ! এখন দেখ, পানিটা পচে গেছে, কেমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ! একটা মাছও এখন নেই l আর পূবের বড়পুকুরের ঘাটগুলো কেমন ভেঙে পড়েছে l লেবু গাছটা কি রকম মরে যাচ্ছে ! গাছটার গোড়ায় মাটি নেই l নারিকেল গাছগুলো আজও দাঁড়িয়ে আছে ! তোর বাবা নিজের হাতে লাগিয়েছিলেন l তোর বাবার শখের গড়া এই বাড়িটা নীরব নিথর বুকে স্মৃতি আঁকড়ে অতীতের সাক্ষী দিচ্ছে l দরজাগুলো ওইপোকার তরে নিজেকে উৎসর্গ করেছে l

তোর মনে পড়ে ? পুরো বাড়িটাকেই তোর বাবা নিজের হাতে হাজারো ফুল-ফলের গাছ লাগিয়ে বাগান বানিয়ে ফেলেছিলো l প্রতিদিন হাজারো রকমের ফুলে চারদিক মৌ মৌ করতো l হাজারো প্রজাপতির আখড়া ছিল এই বাড়িটা l অথচ আজ .....মা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ...
আমি মাকে বললাম, বাবার সাথে দেখা হয় তোমার ?
মা হাসলেন l বললেন, তুই আসবি আমাদের কাছে ? আমি আনন্দে আবেগে মাকে যেই ধরতে গিয়েছি, একি ! মা কোথায় গেলে ! আমি মা- মা- করে চিৎকার শুরু করলাম ! কোথাও নেই; কোথাও নেই মা !
হঠাৎ চোখ খোলে দেখি, রাত 3:45 l উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম l দূর আকাশের তারাদের মাঝে মাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম l মা তুমি কোথায় ? কিভাবে তোমায় দিব্যি ভুলে গিয়ে ভালো আছি মা ! আর বাবার মুখটা ! সে তো স্মৃতিতেও অনেকটাই ধূসর হয়ে গেছে l সময়ের কি অসম্ভব ক্ষমতা ! সব রং ধূসর করে দিয়ে, শূন্যতা ভুলিয়ে মানুষগুলিকে চালিত করে আগামীর পথে l

কি ভাবছো ? স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবে ! হা-হা-হা....আরে বাবা, সময়ের প্রলেপে স্মৃতিও যে ধূসর হয়ে যায় .....
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী মনোমুগ্ধকর উপস্থাপন, শুভ কামনা অহর্নিশি।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
Hasan ibn Nazrul প্রিয় বস্তু হারালে ঘুমের মধ্যেও তা আসবে এটা স্বাভাবিক। আর মা তো সবারই প্রিয়। মায়ের ভালবাসায় সিক্ত হোক প্রতিটি প্রাণ। শুভ কামনা আপনার জন্য

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটি মা-বাবা হারা সন্তানের কিছু স্মৃতি, কিছু বাস্তব উপলব্ধি, যা টপিকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ।

২৭ এপ্রিল - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪